Sunday, November 9, 2014

দৈনন্দিন (৩)


                                                দৈনন্দিন

                                                   

                                                                                 

পড়ার টেবিলে মোটা-মোটা বই, পাতা কোণাচে মোড়া


সামনে খোলা লেখার খাতা,

 
বইঘরের দরজা আবছা ভেজানো, পিঠ ঘুরনো দরজার দিকে

 
চশমা নাকের গোড়ায়.....কত যেন নিবিষ্ট পাঠে !

 
        অথচ.....

                  সমস্ত শরীর-মন

                                  টান-টান

                                            তোমার অপেক্ষায়

 

তোমার আসার কথা ছিল

                        এলে

 

সামনে এসে দাঁড়ালে খানিকক্ষণ,

 

                      ডেকে উঠলে কি একবার ?

 

                                          খুব আস্তে ?

 

 এলোমেলো চুলে ঢাকা ছিল শ্রবণেন্দ্রিয়.....শুনতে পাইনি তাই !

 

হাতে করে কি নিয়ে এলে ?

 

                                টুপটাপ ঝরে পড়ল খোলা খাতার পাতায়

 

টের পেলাম হৃৎপিণ্ডের রক্তস্পন্দন.....

 

কিন্তু,

 

          যদি শিশির হয়ে গড়িয়ে যেতে খোলা ঘাড় বেয়ে,

 

              কাঁধ হয়ে নেমে আসতে হাতের পাতায়

 

                 আমার এতখানি আয়োজনও সম্পূর্ন হয়ে উঠত

 

 

                                              খোলা দরজা দিয়ে কেন সামনে এসে দাঁড়ালে?

 

চমকে উঠব বলে তো তৈরি ছিলাম !

           

 

Saturday, October 18, 2014

দৈনন্দিন (২)


দৈনন্দিন                                         
       

আজ--সকাল থেকে উৎসব।

 তোমার জন্যে অপেক্ষা করেছি , আজ সারাদিন।

 উৎসব ছিল--শরীর-মনে।

সময় এই প্রথম হয়ে উঠেছিল মন্থরগতি বৃদ্ধ কোনো, সমস্ত কাজে,চোখ ঘন্টা-মিনিট-সেকেন্ডে।

ওই বুঝি স্নান সারতে দেরি হল রোজের চেয়ে এক ঘন্টা বেশি!

 বুঝি চুল ঝেড়ে-বেঁধে তৈরি করতে বেরিয়ে গেলো গোটা দিনটা।

 শাড়িটা আজ বড্ড বাড়াবাড়ি করছে তো! বেছে নিলাম তো নরম দেখে! তবুও ?

 টিপটা কি গেল বেঁকে? যাক গে।

 তোমার জন্যে অপেক্ষা করেছি আজ গোটা দিন।

কাঁটার গায়ে উলের মত যেন জড়িয়ে নিয়েছি তোমার নরম উষ্ণ হাত,পালকের মত আঙুল।

 রোদে-পোড়া দিনে ছায়ায় বসার মত মাথা রেখেছি তোমার হাল্কা কাঁধে--চোখ ছুঁয়েছে তোমার চাঁদের আলোর মত ঠোঁট, যেন চুপকথায় চাতকের মত ভরে নিয়েছি ঠোঁটের ওম।

 

তোমার জন্যে পথ চেয়েছি আজ সারাদিন।

নিশ্চুপ বইঘরের জানালায় আছড়ে পড়েছে নাছোড় বৃষ্টি-- টুপ-টাপ,টুপ-টাপ,টুপ-টাপ।

খোলা বই সামনে--পড়েছি,লিখেছি আর পাতার পর পাতা ছিঁড়ে জমে উঠেছে বাসি কাগজের ঝুড়ি।

 দিনশেষের অপেক্ষায়,

                            মুখোমুখি বসেছো তুমি---

 অজন্তার কৃষ্ণ-ভাস্কর্যের ছায়ার মতো নিবিড় সান্নিধ্যে,

 তখন,

 চাঁদের আলোয় কৃষ্ণা দ্বাদশীর টান, নরম পাপড়ি-হাত ঝরে-আসা বকুল যেন।

তবু , মনে করলেই আঙুল-ড্গায় শিশির ছোঁয়ার মতো ছুঁতে পারি তোমায়।

ইচ্ছে হলেই চামচ দিয়ে তুলে ঠোঁট ছোঁয়াতে পারি তোমার লাল চায়ে।

 সারাদিন

সারাদিন

 সারাদিন পরে

ইচ্ছে হলেই তোমায় দেখতে পারি---

                                                       শিউলি ফোটার সময়টুকুয়।

Sunday, September 21, 2014

দৈনন্দিন


                                    দৈনন্দিন

                                                              

বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন সকাল থেকে

 সারাদিন

 বাদল দিনের হাওয়ার মত

                           কখনও জোরে,

                                                                  কখনও আস্তে

ওরা এসেছিল ঠিক তখন

বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে--ভেজা কাগজের নৌকো হয়ে

ঠাণ্ডায় কেপে-ওঠা শরীর,ভিজে সাদা হয়ে যাওয়া ঠোট

তবুও ওরা এসেছিল

 ইট-বের-করা,প্লাস্টার-খসা দেওয়ালের ঘরে জানলা--মাত্র একটাই

 পর্দার বদলে সিন্থেটিক শাড়ির ভাজে আব্রু রাখা কোনোমতেবৃষ্টির দমকে ভিজে উঠেছিল পলকা আবরণ

বড় জোরে পড়ছিল বৃষ্টি----

                                       সারাদিন

 রান্নাঘরের বাসনে জল পড়ার শব্দ ছাপিয়ে উঠেছিল বাইরের বৃষ্টির শব্দ

 তা- এসেছিল ওরা

নাছোড়বান্দা

অবাক হয়ে দেখছিলাম--খাতা, অর্ধেক খোলা,কলম আধা-বন্ধসিগারেট হাতেই অর্ধেক জ্বলে যাচ্ছিল

 রান্নাঘর থেকে ঢুকে এসেছিলে তুমি হাতে-শাড়িতে হলুদ-লঙ্কা-বাটনার ছাপ-ছোপ--- স্টোভের সস্তা কেরোসিনের ছিটে---রান্নাঘরের বেড়াছিটের জলে ভেজা-ভেজা

 শাড়ির পর্দা পেরিয়ে আসা নিলাজ জলে তো ভিজেছিল ঘরের একটাই সস্তা তক্তপোশ,ডাই-করা কাগজপত্র,লেখার দিস্তে খানিক অকেজো স্তূপ, সস্তা কাঠের পায়া নড়বড়ে টেবিল

আর

         খানিকটা আমিও

 "বন্ধ করছো না কেন,জানলাটা? ভিজে যাচ্ছে,ভিজে যাচ্ছ তো..."? বলতে বলতে এগিয়ে এলে তুমি, কপালে ঘাম-জলের সঙ্গে বিরক্তির ছাট

অবাধ্য জলের ছিটে ছিটকে ভেজাল তোমাকেও-- গায়ে জল লাগতেই রাগ-বিরক্তি গলে জল

 তখনও ওরা বসে

নাছোড়বান্দা অপেক্ষায়

সেদিন,

      সন্ধ্যেয় ঝুপ করে নেমে এল অন্ধকার

     দুপুরের পরে আবার বৃষ্টিও

বড় জামবাটিতে সস্তার ঝাল চানাচুর দিয়ে মুড়ি মেখেছিলে,সঙ্গে লাল চা

ওরা ছিল,

 ওরা আসছিল,

পর-পর...পর-পর

 ভেঙে-চুরে-যোগ-বিয়োগে ওদের দিয়ে,ওদের নিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছিলাম পাতার পর পাতা--- জেদী,অবুঝ শব্দেরা বৃষ্টির মতো ভিড় করেছিল চোখে-হাতে-কলমে--পাতার পর পাতায়

 আর, ওদের মতই ঘরময় ঘুরে বেড়াচ্ছিলে তুমি

চোখের পাতায় বৃষ্টি,বৃষ্টি নিয়ে শরীর জুড়ে

,নানা কাজের ছুতোয়---- হারিকেন বাড়িয়ে,কমিয়ে--- তক্তপোশের ছাপা চাদরের কোনা ঝেড়ে-মুছে

 তুমি আছ, এটুকুই শুধু বোধ আর কিছু না কিচ্ছু না

 কাচা সর্ষের তেলের, চানাচুর-সস্তা চা-কেরোসিন-বৃষ্টি-শব্দের গন্ধে মিশে গেছো কখন,

                  নিশ্বাসে---

বেচে থাকার মতই সহজে মেনেছি

সেদিন, চৈত্রমাস

 আচমকা বৃষ্টি ছিলো সকাল থেকেমেঘের অন্ধকারওঅসময়ে

 সেদিন, ওরা ছিলো সকাল থেকে আষ্টেপৃষ্ঠে তুমি ছিলে

 

বৃষ্টি থেমেছে,অন্ধকার কেটেছে ওরা গেছে

                 তুমিও নেই আর

 

                                                 কোথাও না কোত্থাও না